কুরআন ও হাদিসের আলোকে রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত

  কুরআন ও হাদিসের আলোকে রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত। ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ হচ্ছে রোজা। মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের উপর রোজা ফরজ করেছেন। সামনেই আসছে পবিত্র মাহে রমজান। রমজান মাসে আমরা কি কি আমল করতে পারবো এবং কুরআন ও হাদিসের আলোকে রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানবো।


কুরআন-ও-হাদিসের-আলোকে-রোজার-গুরুত্ব-ও-ফজিলত

একজন মুসলমান হিসাবে আমাদের অবশ্যই রোজার গুরুত্ব ফজিলত সম্পর্কে জানতে হবে। রমজান মাসে আমরা কিভাবে ইবাদত করবো, রোজা আমাদের জন্য কেন ফরজ করা হয়েছে কুরআন ও হাদিসের আলোকে রোজার গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত সম্পর্কে আজ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো।

পেজ সূচিপত্র ঃ কুরআন ও হাদিসের আলোকে রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত

রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

রমজান মাস হচ্ছে মুসলমানদের জন্য একটি আত্মশুদ্ধির মাস। যে মাসে আমরা রোজা রাখার মাধ্যমে তাকওয়ার পথে পরিচালিত হই। এই পবিত্র রমজান মাসে মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদের জন্য তাঁর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের দরজা খুলে দেন। এই একটা মাস আমাদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলত এর মাস।

একজন মুসলমান হিসাবে এই পবিত্র রমজান মাসের রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত জানা অতীবত জরুরী এবং গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে চলুন রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত সম্পর্কে জেনে নিই।

১. আয়াত ঃ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ 

উচ্চারণ ঃ ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুস সিয়ামা কামা কুতিবা আলাল্লাজিনা  মিন কবলিকুম লাল্লাকুম তাত্তাকুন।

বাংলা অর্থ ঃ হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপরে আল্লাহর পক্ষ থেকে রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।(সূরা আল-বাকারা আয়াতঃ ১৮৩)

২. আয়াত ঃ شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ

উচ্চারণ ঃ সাহ্রু রামাদানাল্লাজিনা উংঝিলা ফিহিল-কুরআনু হুদাল্লিন-নাসি ওয়াবায়্যিনাতিম মিনাল হুদা ওয়াল ফুরকন, ফামান সাহিদা মিনকুমুশ-শাহ্‌রা ফালইয়াশুমহু ।

বাংলা অর্থ ঃ রমজান হলো সেই মাস, যাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সঠিক পথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। অতএব তোমাদের মধ্যে যে এই মাস পাবে, সে যেন রোজা রাখে।।

৩. আয়াত ঃ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ

বাংলা অর্থ ঃ সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এই মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে।(সূরা বাকারা, ১৮৫)

রোজা সম্পর্কে হাদিস

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বলেন, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরশাদ করেছেন-

যখন তোমরা (রমজানের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোজা রাখবে আর যখন (শাওয়ালের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোজা বন্ধ করবে। আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে ৩০ দিন রোজা রাখবে। সহিহ- বুখারী, হাদিস ঃ ১৯০৯, সহীহ মুসলিম, হাদিস ঃ ১০৮০ (১৭-১৮)

হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

بينما أنا نائم أتاني رجلان فأخذا بضبعي فأتيابي جبلا وعرا فقالا : اصعد؛ فقلت : إني لا أطيقه. فقالا: سنسهله لك، فصعدت حتى إذا كنت في سواء الجبل إذا بأصوات شديدة، قلت : ما هذه الأصوات؟ قالوا هذا عواء أهل النار، ثم انطلق بي، فإذا أنا بقوم معلقين بعراقيبهم، مشققة اشداقهم، تسيل اشداقهم دما. قال : قلت : من هؤلاء : قال : الذين يفطرون قبل تحلة صومهم.

رواه الحاكم فى المستدرك وقال : صحيح على شرط مسلم، ووافقه الذهبي، وذكره الهيثمى فى المجمع ، وقال : رجاله رجال الصحيح

আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম আমার নিকট দুই ব্যক্তি আগমন করল। তারা আমার বাহু দয় ধরে আমাকে এক দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে এলো। তারপর আমাকে বলল, আপনি পাহাড়ের উপর উঠুন। আমি বললাম, আমি তো উঠতে পারবো না। তারা বলল, আমার আপনাকে সহজ করে দিব। আমি উপরে উঠলাম। যখন পাহাড়ের সমতলে পৌছালাম, হঠাৎ ভয়ংকর আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি বললাম, এসব কিসের আওয়াজ ? তারা বললো, এটা জাহান্নামীদের আর্তনাদ। তারপর তারা আমাকে নিয়ে এগিয়ে চলল। হঠাৎ কিছু লোক দেখতে পেলাম, যাদেরকে তাদের পায়ের মাংসপেশি দ্বারা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এবং তাদের মুখের দুই প্রান্ত ছিড়ে ফেলা হয়েছে এবং তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি বললাম, এরা কারা? তারা বলল, যারা ইফতারের সময় হওয়ার আগেই রোজা ভেঙ্গে ফেলে। সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস ঃ ১৯৮৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ঃ ৭৪৪৮, সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদিসঃ ৩২৮৬,মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিসঃ ১৬০৯, তবারানী, হাদিস ঃ ৭৬৬৬।

রমজান মাসের একদিন রোজা না রাখলে মানুষ শুধু গুনাগার হয় না ওই রোজার পরিবর্তে আজীবন রোজা রাখলেও রমজানের এক রোজার যে মর্যাদা ও করলেন যে অন্তত রহমত ও বরকত কখনো লাভ করতে পারবে না। এবং কোনোভাবেই এর যথার্থ ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবেনা।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন,

من افطر يوما من رمضان متعمدا من غير سفر ولا مرض لم يقضه ابدا، وان صام الدهر كله، ... وقد ذكره ا

لبخاري تعليقا بصيغة الجزم حيث قال : وبه قال ابن مسعود، وقال الشيخ محمد عوامه : وهذا الحديث موقوف لفظا 

-ومرفوع حكما  

যে ব্যক্তি অসুস্থতা ও সফল ব্যতীত ইচ্ছাকৃতভাবে রমজানের একটি রোজা ভঙ্গ করে, সে আজীবন রোজা রাখলেও ঐ রোজার হক আদায় হবে না। মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস ঃ ৯৮৯৩, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস ঃ ৭৪৭৬, সহি বুখারী ৪/১৬০।

হযরত আলী রাঃ বলেন,

যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রমজান মাসের একটি রোজা ভঙ্গ করবে, সে আজীবন সেই রোজার (ক্ষতিপূরণ) আদায় করতে পারবে না। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদিসঃ ৯৮৭৮

রোজার গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য

রোজার বিশেষ কিছু গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য তার কিছু দৃষ্টান্ত নিম্নে উল্লেখ করার চেষ্টা করবো। বিস্তারিত জানতে নিচের অংশটুকু ভালোমতো পড়ুন।

সিয়াম ও কিয়ামের মাস 

মুসলিম উম্মাহর নিকট রমজান মাসের আগমন ঘটে প্রধানত প্রজা ও তারাবির বার্তা নিয়ে। এটি রমজান মাসের বিশেষ আমল, তাই প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য পূর্ণ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে এ বিষয়ে যত্নবান হওয়া। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী (মুত্তাকী) হতে পারো। সূরা বাকারা; ১৮৩।

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বলেন, যখন রমজান মাসের আগমন ঘটলো, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তোমাদের নিকট বরকতময় মাস রমজান এসেছে। আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য এই মাসের রোজা ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজার সমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদেরকে শিকলে বন্দী করা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে তো প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত। মুসনাদের আহমদ, হাদিস ৭১৪৮, সুনানে নাসাঈ, হাদিসঃ ২৪১৬, মোসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস ৮৩৮৩, মোসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদিস ৮৯৫৯।

কুরআন নাযিলের মাস

রমজানুল মোবারকের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো তা কুরআন নাযিলের মাস। এই পবিত্র মাসেই আল্লাহ তা'আলা পূর্ণ কুরআন মাজীদ লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ করেন। অতঃপর রাসূলের কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কুরআনের সর্বপ্রথম ওহী এ মাসে নাযিল করেন।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন -রমজান মাস, যাতে কুরআন নাযিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সুপথ প্রাপ্তির সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর হক বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের যে কেউ এই মাস পাবে সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে। (সূরা বাকারা ১৮৫)।

মুসলমানদের জন্য সর্বোত্তম মাস

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেছেন-

কুরআন-ও-হাদিসের-আলোকে-রোজার-গুরুত্ব-ও-ফজিলত

আল্লাহ তায়ালার কসম, মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোন মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাশক আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে(গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষ ত্রুটি অন্বেষণ করে। মুমিনদের জন্য গনিমত আর মুনাফিকদের জন্য ক্ষতির কারণ। মুসনাদে আহমদ, হাদিস ৮৩৬৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদিস ৮৯৬৮; সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস ১৮৮৪; তবারানি হাদিস ৯০০৪; বাইহাকি সুয়াবুল ঈমান, হাদীস ৩৩৩৫।

রহমতের মাস এ মাসে জান্নাতের দরজা খোলা হয়

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন,

যখন রমজান মাসের আগমন ঘটে, তখন জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজার সমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদেরকে শৃঙ্খলা বদ্ধ করা হয়। সহিহ বুখারী, হাদিস ১৮৯৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস ১০৭৯; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ৮৬৮৪; সুনানে দারেমী ,হাদিস ১৭৭৫।

জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ এবং দোয়া কবুলের মাস

আল্লাহ তায়ালা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দান করেন। সুতরাং আমাদের কর্তব্য, বেশি বেশি নেক আমল এবং তওবা ইস্তেগফারের মাধ্যমে নিজেদেরকে এই শাহী ফরমানের অন্তর্ভুক্ত করা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরশাদ করেছেন,

অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা রমজান মাসের প্রত্যেক দিবস ও রাত্রিতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন। মুসনাদে আহমদ, হাদিস ৭৪৫০; মুসনাদে বযযার, হাদিস ৯৬২।

গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভের মাস

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলতেন,

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমআ থেকে আরেক জুমআ এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ সমূহকে মুছে দেই যদি সে কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। সহীহ মুসলিম, হাদিস ২৩৩

এমন সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যে ব্যক্তি নিজের পাপ সমূহ ক্ষমা করতে পারে না সে সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত। হাদীস শরীফে তার জন্য বদ দোয়া করা হয়েছে।

লাইলাতুল কদরের মাস

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে মুসলিম উম্মাহর জন্য আরেকটি বিশেষ দান হলো এক হাজার রাত অপেক্ষা উত্তম লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তাআলা এ রাত সম্পর্কে এরশাদ করেছেন,

লাইলাতুল কদর এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ রাতে ফেরেশতাগণ ও (জিব্রাইল আঃ) তাদের পালনকর্তার আদেশক্রমে প্রত্যেক কল্যাণময় বস্তু নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। যে রাতে পুরোটাই শান্তি, যা ফজর হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। সূরা কদর (৯৭)

রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত

যে ব্যাক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রমজান মাসের একটি রোজা ভঙ্গ করবে, সে আজীবন সেই রোজার(ক্ষতিপূরণ) আদায় করতে পারবে না। মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস ঃ ৯৮৭৮

হাদিস শরীফে বর্ণিত রোজার কিছু গুরুত্ব ও ফজিলত নিম্নে উল্লেখ করা হলো ;

রোজার প্রতিদান আল্লাহ তায়ালা নিজেই দিবেন এবং বিনা হিসাবে দিবেন

প্রত্যেক নেক আমলের নির্ধারিত স্বভাব ও প্রতিদান রয়েছে যার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা আমলকারীকে পুরস্কৃত করবেন। কিন্তু রোজার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা, কারণ রোজার বিষয়ে আছে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে এক অনন্য ঘোষণা,

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকীর সব ১০ গুণ থেকে ২৭ গুণ পর্যন্ত। আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেন, কিন্তু রোজা আলাদা। কেননা তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করবো। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে। সহীহ মুসলিম, হাদিস ঃ ১১৫১ (১৬৪); মুসনাদে আহমদ, হাদিস ঃ ৯৭১৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদিস ঃ ৮৯৮৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ঃ ১৬৩৮।

মহান আল্লাহ রোজাদারকে কেয়ামতের দিন পানি পান করাবেন

হযরত মুসা রাঃ হতে বর্ণিত,

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজের উপর অবধারিত করে নিয়েছেন, যে ব্যাক্তি তারা সন্তুষ্টির জন্য গ্রীষ্মকালে (রোজার কারণে) পিপাসার্ত থেকেছে, তিনি তাকে তৃষ্ণার দিন (কেয়ামতের দিন) পানি পান করাবেন। মুসনাদের বাযযার, হাদিস ঃ ১০৩৯, মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদিস ঃ ৫০৯৫।

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

আল্লাহ তাআলা বলেন, রোজা আমার জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব। কেয়ামতের দিন রোজাদারদের জন্য একটি বিশেষ প্রাণীর হাউজ থাকবে, যেখানে রোজাদার ব্যতীত অন্য কারো আগমন ঘটবে না। মুসনাদে বাযযার, হাদিস ঃ ৮১১৫;মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদিস ঃ ৫০৯৩।

রোজা হলো জান্নাত লাভের পথ

হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু বলেন, আমি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার বুকের সাথে মিলিয়ে নিলাম, তারপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, বলে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, যে ব্যাক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় একদিন রোজা রাখবে, পরে তার মৃত্যু হয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো দান সদকা করে অতঃপর মৃত্যুবরণ করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। মুসনাদে আহমদ, হাদিস ঃ ২৩৩২৪; মুসনাদে বাযযাদ , হাদিস ঃ ২৮৫৪।

রোজাদার ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে 'রাইয়ান' নামক বিশেষ দরজা দিয়ে

হযরত তাহলে ইবনে সাদ রাঃ হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

জান্নাতে একটি দরজা আছে, যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে কেবল রোজাদার ব্যাক্তিরাই প্রবেশ করবে। অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা করা হবে-কোথায় সেই সৌভাগ্যবান রোজাদারগন ? তখন তারা উঠে দাঁড়াবে। তারা ব্যতীত কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অতঃপর রোজাদার গুণ যখন প্রবেশ করবে, তখন তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সহীহ বুখারী, হাদিস ঃ ১৮৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদিস ঃ ১১৫২; মুসনাদে আহমদ, হাদিস ঃ ২২৮১৮।

রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল ও দুর্গ

হযরত জাবির রাঃ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

আমাদের মহান রব ইরশাদ করেছেন, রোজা হলো ঢাল। বান্দা এর দ্বারা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। রোজা আমার জন্য আর আমি এর পুরস্কার দিব। মুসলাদে আহমদ, হাদিস ঃ ১৪৬৬৯; শুয়াবুল ঈমান বায়হাকী, হাদিস ঃ ৩৫৭০।

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

রোজা হলো (জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ লাভের) হাল এবং সুরক্ষিত দূর্গ। মুসনাদের আহমদ, হাদিস ঃ ৯২২৫; বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান, হাদিস ঃ ৩৫৭১।

রোজা কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাজিউলা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন,

রোজা ও কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে রব, আমি তাকে খাদ্য ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি,(অর্থাৎ না ঘুমিয়ে সে তেলাওয়াত করেছে) অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, অতপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। মুসনাদে আহমদ, হাদিস ঃ ১৯৯৪।

আল্লাহর নৈকট লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম

হযরত আবু উমামা রাঃ বর্ণনা করেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুল আল্লাহ , আমাকে কোন আমলের আদেশ করুন। তিনি বললেন, তুমি রোজা রাখো, কেননা এর সমতুল্য কিছু নেই। আমি পুনরায় বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমাকে কোন নেক আমলের কথা বলুন, তিনি বললেন, তুমি রোজা রাখো, কেননা এর কোন সমতুল্য কিছু নেই। সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস ঃ ১৮৯৩; মুসনাদে আহমদ, হাদিসঃ ২২১৪০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিসঃ৩৪২৫; সুনানে নাশায়ী কুবরা, হাদিসঃ২৫৩৩।

রোজাদারের দোয়া কবুল হয়

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেছেন,

ইফতারের সময় রোজাদার যখন দোয়া করে, তখন তার দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।(অর্থাৎ তার দোয়া কবুল হয়) সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ঃ ১৭৫৩।

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণনা করেন, নবী কারীম সাঃ ইরশাদ করেছেন,

রোজা তাদের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। মোশার মাফি ইবনে আবী শাইবা, হাদিসঃ ৮৯৯৫।

রোজাদারের মুখের গন্ধ মিশকের চেয়েও সুগন্ধি যুক্ত

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন,

সেই সত্তার শপথ, যার হাতে মোহাম্মদের জীবন, রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধি ময়। শহীদ বুখারী, হাদিস ঃ ১৯০৪; সহীহ মুসলিম, হাদিস ঃ ১১৫১ (১৬৩); মুসনাদে আহমদ, হাদিস ঃ ৭১৭৪; সুনানে নাসাঈ, হাদিসঃ ২৫২৩; শুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ১৬৩৮।

রোজাদারের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন,

যে ব্যাক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। সহীহ বুখারী, হাদিস ঃ ৩৮,২০১৪; সহি মুসলিম ৭৬০ (১৬৫); মুসনাদে আহমদ, হাদিস ঃ ৭১৭০; মোসাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস ঃ ৮৯৬৮।

রমজানের প্রথম ও দ্বিতীয় ১০ দিনের আমল

রমজানের প্রথম ১০ দিন হলো রহমতের এবং দ্বিতীয় ১০ দিন হলো মাগফিরাতের। আরে রহমতের ও মাগফিরাতের ১০ দিনে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে যেগুলো আমাদের জানা উচিত। কেননা এই ২০ দিন যদি আমরা বেশি বেশি নেক আমল করতে পারি তাহলে আল্লাহর রহমতে মাগফিরাত অধিক পরিমাণ অর্জন করতে পারবো। তাহলে চলুন রমজানের প্রথম ও দ্বিতীয় ১০ দিনের আমল সম্পর্কে জেনে নিই।

কুরআন-ও-হাদিসের-আলোকে-রোজার-গুরুত্ব-ও-ফজিলত

  • সর্বদা বেশি বেশি তওবা পাঠ করা। অতীতের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করা।
  • পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ খুব গুরুত্ব সহকারে আদায় করা। বিশেষ করে আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে অধিক গুরুত্ব সহকারে আদায় করতে হবে। তার পাশাপাশি তাহাজ্জুত, নফল, সুন্নত নামাজ বেশি বেশি আদায় করতে হবে।
  • চেষ্টা করবেন প্রত্যেক সেহরিতে উঠে, সেহরি খাওয়ার আগে ২,৪,৬ রাকাত তাহাজ্জুত নামাজ আদায় করার।
  • রমজানের প্রথম ১০ দিন বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করা। এছাড়াও আপনি বেশি বেশি জিকির করতে পারেন। কাজে ব্যস্ত থাকলে আপনি জিকির করতে পারেন।
  • রমজানের প্রথম ও দ্বিতীয় ১০ দিন বেশি বেশি দান সদকা করুন। বেশি বেশি দান সদকা দোয়া কবুলের অন্যতম অস্ত্র।
  • প্রতিবেশীদের সাথে ইফতারি করুন। প্রতিবেশী কি খেয়ে ইফতারি করছে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
  • রমজান মাসে বেশি বেশি এই দোয়াটি পড়ুন, "আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তৌহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু আন্নি"।
  • রোজা রাখা অবস্থায় পরিবার, আত্মীয়-স্বজন সকলের খোঁজ খবর রাখুন এবং ভালো ব্যবহার করুন।
  • পিতা-মাতার খেদমত করুন এবং প্রতিবেশীদের হক আদায় করুন।
  • রমজান মাসে বেশি বেশি দোয়া, ইস্তেগফার, কালেমা, দরুদ শরীফ পাঠ করুন।

রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল

রমজান মাসের প্রথম এবং দ্বিতীয় ১০ দিনের আমলের চাইতে শেষ ১০ দিনের আমল সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান। কেননা এই ১০ দিনের আমলে আল্লাহ পাক অধিক সংখ্যক বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয় এবং তাকওয়াবান বানিয়ে দেয়। তাই সকল মুসলমানের উচিত রমজানের শেষ 10 দিন একটু বেশি পরিমাণে আমল করা এবং লাইলাতুল কদরের তালাশ করা। এই শেষ ১০ দিনে যেসব আমল বেশি বেশি করবেন...

  • রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ পালন করুন। এ আমলটি আমাদের জন্য সর্বোত্তম একটি সুন্নতি আমল। হচ্ছে রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে থেকে ইবাদত করা এবং দুনিয়ার সমস্ত চিন্তা ও ব্যস্ততা বাদ দিয়ে এক আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরি করা।
  • ইতিকাফে থাকা অবস্থায় বেশি বেশি নামাজ ও কুরআন তিলাওয়াত করা। পাশাপাশি তওবা পাঠ, ও লাইলাতুল কদরের তালাশ করা।
  • লাইলাতুল কদরের রাত হাজার রাতের চেয়েও উত্তম একটি রাত। যে রাতে ইবাদত করলে হাজার মাসের ইবাদত করার সওয়াব পাওয়া যায়।
  • প্রথম ও দ্বিতীয় দশকের তুলনায় রমজানের শেষ দশকের তাহাজ্জুদ নামাজ এবং অন্যান্য নফল নামাজ অধিক পরিমাণে পড়ুন।
  • কুরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝে পড়ার চেষ্টা করুন। অর্থসহ কুরআন তিলাওয়াত করতে পারলে সব বেশি পাবেন।
  • রমজান মাসে যেহেতু পবিত্র কুরআন মাজীদ নাযিল হয়েছে, তাই চেষ্টা করুন এই মাসে অর্থসহ কুরআন খতম দেওয়ার।
  • রমজানের এই দিনগুলোতে বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়ুন। এবং অতীতের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
  • রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি দান সদকা করুন।
  • অন্যের গীবত করা ও মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকুন। রোজা অবস্থায় গীবত বা মিথ্যাচার করলে আপনার রোজা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।
  • রমজানের শেষ দশকে বিদায়ী রমজানের দোয়া পড়ুন এইভাবে, হে আল্লাহ, আমার ইবাদত কবুল করুন। সামনে রমজানে পৌঁছানোর তৌফিক দান করুন।

রোজা ও তাকওয়া অর্জন

রমজান মাস আমাদের আত্মশুদ্ধির মাস। যে মাসে শুধুমাত্র খুদা ও পিপাসা সহ্য করা আমাদের কাজ নয় বরং এ মাসে আমাদেরকে আল্লাহর ভীতি অর্জন করতে হবে। আর এই মাস হল তাকওয়া অর্জন করার সবচেয়ে উত্তম মাস। কেননা আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন-

হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে রোজা, ফরজ করা হয়েছে, যেমনটি করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যেন তোমরা তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি অর্জন করতে পারো।

উপরোক্ত এই আয়াত থেকে আমরা এটাই বুঝতে পারি যে, রোজার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন করা। রোজা রাখার মাধ্যমে আমরা আমাদের ক্ষুধা, পিপাসা এবং দুনিয়ার যাবতীয় অশ্লীল আকাঙ্ক্ষার নিয়ন্ত্রিত করতে পারি। যেটা আমাদের তাকওয়ার মূল ভিত্তি।

সারাদিন আমরা না খেয়ে রোজা রাখি। অতঃপর আল্লাহর নির্দেশে সন্ধ্যার সময় ইফতারি করি। যেটা আমাদেরকে আল্লাহর আনুগত্য শিখায়। রোজা এমন একটি ইবাদত যেটা কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালা জানেন, আমরা ইচ্ছা করলে গোপনে খেতে পারি। কিন্তু আল্লাহর ভয় আমাদের মধ্যে থাকার জন্য আমরা না খেয়ে থাকি। আর এটাই হচ্ছে তাকওয়া, যেটা কেবলমাত্র রোজার মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব হয়।

রোজা রাখার শারীরিক উপকারিতা

রোজা রাখার মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে যেমন আমাদের ওপরে রহমত বর্ষিত হয় ঠিক তেমনি রমজানের রোজা রাখার মাধ্যমে আমাদের শরীরে বিশেষ কিছু উপকার সাধিত হয়। আর বর্তমান সময়ে আধুনিক বিজ্ঞানের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে রোজা রাখার ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন কার্যপ্রতিক্রিয়ায় এক ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। চলুন জেনে নিই রোজা রাখার ফলে আমরা কি কি শারীরিক উপকারিতা পেয়ে থাকি।

কুরআন-ও-হাদিসের-আলোকে-রোজার-গুরুত্ব-ও-ফজিলত

  • রমজানের রোজা রাখার ফলে আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন এবং অপ্রয়োজনীয় পদার্থগুলো দূরীভূত হয়।
  • রোজা পালন করার ফলে আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং শরীরে ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমায়।
  • রোজা আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। পাশাপাশি আমাদের ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা বাড়িয়ে থাকে।
  • নিয়মিত রমজানের রোজা পালন করার ফলে আমাদের শরীর থেকে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। যার ফলে হার্ট সুস্থ থাকে।
  • রোজা আমাদের মস্তিষ্কের নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে থাকে।
  • রোজা থাকার ফলে সারাদিন আমরা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকি, যার কারণে আমাদের পচনতন্ত্র বিশ্রাম পায় এবং আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • নিয়মিত রোজা রাখার ফলে আমাদের লিভারের ফাংশন উন্নতি হয়, এবং ফ্যাটি লিভার এটি প্রতিরোধ করে।
  • রোজা রাখার ফলে আমাদের শরীরে সাদা রক্ত কণিকা বৃদ্ধি পায়। যেটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • রোজা রাখার ফলে আমাদের বিভিন্ন রকমের ডিপ্রেশন কমে যায়, যার ফলে মানসিক শান্তি প্রদান করে।

শেষ কথা ঃ কুরআন ও হাদিসের আলোকে রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত

রমজান মাস মানে আত্মশুদ্ধির মাস, পাপ মোচনের মাস। যে এ মাসটি পেল এবং নিজের পাপ মোচন করতে পারল না তার মত দুর্ভাগ্য আর কেউ হতে পারে না। তাই এই মাসটি আপনার জীবনে আছে মানে আপনি একজন ভাগ্যবান ব্যক্তি। তাই হেলাই না কাটিয়ে ৩০ টি রোজা রাখুন এবং আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করুন। এই মাসে যত বেশি দান করবেন, তত বেশি সাওয়াব পাবেন।

প্রিয় পাঠক, আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে আপনি নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন কুরআন ও হাদিসের আলোকে রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে। এছাড়াও আরো জানতে পেরেছেন রোজা রাখার মাধ্যমে কিভাবে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করা যায়, কিভাবে আপনার শারীরিক উপকার পাবেন ইত্যাদি আরো আনুষঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে। আমার আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে নিয়মিত আমার ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মুন্নি ফিল্যান্সারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url