মোটা হবার সহজ উপায়-১৫ টি কার্যকারী টিপস

   মোটা হবার সহজ উপায়-১৫ টি কার্যকারী টিপস। ওজন কিভাবে বাড়ানো যায় সেটা অনেকেই জানতে চেয়েছেন, অতিরিক্ত ওজন যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিকর, তেমনি স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন শঙ্কার কারণ হতে পারে। পুষ্টিকর খাবার এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে সহজেই ওজন বাড়াতে পারবেন।


মোটা-হবার-সহজ-উপায়-১৫-টি-কার্যকারী-টিপস

আজকের আর্টিকেলে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ওজন বাড়াতে কোন সময় কোন খাবার কিভাবে খাবেন এবং কি ধরনের ব্যায়াম করতে হয়, তার সাথে থাকবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা। তাহলে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পেজ সূচিপত্র ঃ মোটা হবার সহজ উপায়-১৫ টি কার্যকারী টিপস

মোটা হবার সহজ উপায়

মোটা হবার সহজ উপায় সম্পর্কে যাদের প্রশ্ন ছিল মূলত তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটি। তাড়াতাড়ি মোটা হওয়ার জন্য সঠিক ও স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি আপনার ওজন বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত থাকেন তাহলে আমার আজকের আর্টিকেলটি অনুসরণ করুন। সর্বপ্রথম আপনি আপনার বয়স অনুযায়ী ওজন কেমন সেটা দেখবেন। বয়স অনুযায়ী যদি আপনার ওজন বৃদ্ধি না পাই তাহলে অবশ্যই আপনার উচিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।

যদি আপনার বয়স অনুপাতে ওজন ঠিক থাকে তবে আপনি যদি নিজের ইচ্ছায় চান যে আমি আরেকটু মোটা হতে চাই, তাহলে অবশ্যই আপনাকে সুষম খাদ্যাভাসের অভ্যাস করতে হবে। মোটা হবার সবচেয়ে সহজ উপায় হল পুষ্টিগুণযুক্ত খাবার, প্রোটিন যুক্ত খাবার, এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস তৈরি করা। পুষ্টিকর খাবার কোনগুলো বা সকালের নাস্তায় কি খাবেন, দুপুরের খাবারে কি খাবেন, রাতের খাবারের কি খাবেন, এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা নিম্নে প্রদত্ত হলো ।

ওজন কম হওয়ার কারণ

মোটা হবার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে আপনার ওজন কম হওয়ার কারণগুলো। যেহেতু স্বাভাবিকভাবেই মানুষ বড় হবার সাথে সাথে বা বয়সের সাথে সাথে স্বাস্থ্যবান হয়। এক্ষেত্রে আপনার স্বাস্থ্য কেন ভালো হচ্ছে না বা আপনি কেন মোটা হচ্ছেন না আসল কারণটা আপনাকে জানতে হবে। ওজন কম হওয়ার বিশেষ কিছু কারণ রয়েছে, এই কারণগুলো যদি আপনার মধ্যে বিদ্যমান থাকে তাহলে সহজে আপনার ওজন বৃদ্ধি হবে না। তাহলে চলুন আগে জেনে নেই ওজন কম হওয়ার কারণ সমূহ।যেমন;

  • পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ না করা।
  • সকালে নাস্তা ঠিকমত না করা।
  • রাতে দেরি করে ঘুমাতে যাওয়া।
  • সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠা।
  • অস্বাস্থ্যকর খাবার বেশি খাওয়া।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে ফাস্টফুড খাওয়া।
  • হজমের সমস্যা থাকলে।
  • খাবার খাওয়ার পরপরই টয়লেটে চাপ আসা।

উপরে উল্লেখিত কারণগুলো ছাড়াও আরো অনেক কারণ থাকতে পারে ওজন কম হওয়ার জন্য। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি খেয়াল রাখবেন এই সমস্যাগুলো আপনার মধ্যে আছে কিনা। উপরে উল্লেখিত সমস্যাগুলি যদি আপনার মধ্যে বিদ্যমান থাকে তাহলে এগুলো পরিহার করুন। দেখবেন স্বাভাবিকভাবে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে।

আরো পড়ুন ঃ মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

ওজন বাড়ানোর ডায়েট চার্ট

মোটা হবার সহজ উপায় সম্পর্কে জানতে হলে আগে ডায়েট চার্ট ফলো করতে হবে। ওজন বাড়ানোর ডায়েটে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, রাতের খাবার এবং হালকা নাস্তা হিসাবে কোন ধরনের খাবারগুলো খেয়ে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। তার সাথে কিভাবে এবং কি পরিমাণে খাবার খেতে হবে তা জানতে নিচে পরুন।

ওজন বাড়াতে সকালের নাস্তায় কি খাবেন

ওজন বাড়ানোর জন্য সকালের নাস্তার পাশাপাশি যেসব খাবার খাবেন, তার মধ্যে হলো দুধ, কলা, ডিম ও খেজুর। এই খাবার গুলি কি পরিমান খাবেন চরম বিস্তারিত জেনে নেই।

দুধ ঃ শরীরের প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় দুধে। দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন বি-১২। শরীরের হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে সাহায্য করে, এবং ভিটামিন বি- ১২ রক্ত তৈরি করে এবং রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

পাশাপাশি দুধ ওজন বৃদ্ধি করতে বেশ সহায়ক। দুধ খাওয়ার একটি বড় সুবিধা হলো, অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি খুব সহজে এক গ্লাস দুধ খেয়ে নেয়া যায়। দুধ আপনি যেকোনো বেলায় যেকোনো খাবারের সাথে আপনি খেতে পারবেন। ভীষণ স্বাস্থ্যকর একটি খাবার তাই ওজন বৃদ্ধি করতে চাইলে সকালের নাস্তার পাশাপাশি এক গ্লাস দুধ খাবেন।

কলা ঃ কলাতে রয়েছে ভিটামিন বি -৬, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও কলাতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার, যা হজমে সাহায্য করে এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও কলা খুব পুষ্টিকর একটি খাবার, আর এটি খুব কম দামে বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। কলা খাওয়ার জন্য আপনাকে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হবে না।

কলা এমন একটি ফল যা বারো মাস বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। ছোট থেকে বড় সবাই কলা খেতে খুব পছন্দ করে। তাই ওজন বাড়াতে চাইলে অবশ্যই সকালের নাস্তার সাথে কলা খাবেন।

ডিম ঃ ডিম কে প্রকৃতির মাল্টিভিটামিন বলা হয়। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেল। ডিমে থাকা ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং ভিটামিন বি ২ ত্বককে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। ডিমে আরও রয়েছে জিংক নামের মিনারের যা দেহের রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয় জিমে অনেক রকমের ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান।

খেজুর ঃ খেজুর অসাধারণ একটি পুষ্টিকর ফল। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে আইরন, ফলিক এসিড, আছে যা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় খেজুরে আরও রয়েছে ফাইবার ও আঁশ, ফাইবার হজম বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

প্রতিদিন সকালে অন্যান্য নাস্তার সাথে দুই তিনটা খেজুর খেয়ে নিন। খেজুর ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে ভীষণ ভূমিকা পালন করে। খেজুর খুব স্বাস্থ্যবান একটি খাবার, যা সব বয়সের মানুষই খেতে পারবেন।

ওজন বাড়াতে দুপুরের খাবারে কি খাবেন

ওজন বাড়াতে দুপুরের খাবারের সাথে যেসব খাবার যোগ করতে পারেন তার তালিকা নিম্নে প্রদত্ত হলো।

ডাল ঃ ডাল ভীষণ পুষ্টিকর একটি খাবার। ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন বা আমিষ। বিভিন্ন ধরনের মাংসের চাইতেও ডালে প্রোটিন বেশি পাওয়া যায়। গরু, খাসি এসব মানুষের যেমন প্রোটিন রয়েছে তেমন ক্ষতিকর চর্বিও রয়েছে। কিন্তু ডালে সেই ঝুঁকি নেই, ইচ্ছা মত আপনি ডাল খেতে পারেন।

এছাড়াও ডালে রয়েছে আয়রন, পটাশিয়াম ,ম্যাঙ্গানিজ সহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান।সহজে মোটা হবার উপায় হলো দুপুরের খাবারে প্রতিদিন ডাল খাওয়া। এটা যেমন প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করবে তেমনি আপনার কজন বাড়াতেও সাহায্য করবে।

টক দই ঃ দুপুরের খাবার শেষে এক বাটি টক দই খেতে পারেন। টক দই দুধ দিয়ে বানানো তাই এতে দুধের পুষ্টি বিদ্যমান। শুধু তাই নয়, শুধু তাই নয় টক দই অনেক উপকারি জীবাণু রয়েছে। টক দই খাওয়ার মাধ্যমে পেটের ভেতরের উপকারী অণুজীব গুলোর মত নতুন আরো অনেক উপকারী অণুজীব তৈরি হতে পারে। এবং পরবর্তীতে পেটের মধ্যে থাকা ক্ষতিকর জীবাণু থেকে আপনাকে সুরক্ষা দেবে।

মুরগির মাংস ঃ দুপুরের খাবারে মুরগির মাংস রাখতে পারেন। সাধারণত যদি আপনি দুই পিস মাংস খেয়ে থাকেন তাহলে ওজন বাড়ানোর জন্য আর দুই পিস বেশি করে খাবেন। অনেকেই গরুর মাংস খাসির মাংস খাওয়ার পরামর্শ দেয় তবে এক্ষেত্রে আমি বলবো গরু খাসির চাইতে মুরগির মাংস স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী। মুরগির মাংস পরিমানে বেশি খেলে আপনার কোন ক্ষতি সাধন করবে না। কিন্তু গরু খাসির চর্বিযুক্ত মাংস বেশি খেলে উপকারের চাইতে, বেশি ক্ষতি সাধন করবে।

মাছ ঃ মাছ আমিষ যুক্ত খাবার এটা আমরা জানি, চেষ্টা করবেন নিয়মিত দুপুরে ও রাত্রে ১-২ পিস মাছ খাবার। মাছ আমাদের শরীরে প্রোটিন ও আমিষের চাহিদা পূরণ করে, পাশাপাশি ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। মাছ পরিমানে বেশি খেলেও আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কোন ক্ষতি করবে না। তাই ইচ্ছা মতো মাছ খেতে পারেন।

ওজন বাড়াতে বিকালের হালকা নাস্তায় কি খাবেন

ওজন বৃদ্ধি করতে চাইলে বিকালের হালকা নাস্তায় বিভিন্ন ধরনের ড্রাইফুড রাখতে পারেন। যেমন; বাদাম, কিসমিস, বিভিন্ন ধরনের বীজ ইত্যাদি হালকা নাস্তা হিসাবে খেতে পারেন। এটা আপনার ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। তাহলে চলুন এই ড্রাই ফুটে কি পরিমাণ ভিটামিন রয়েছে এবং কি কি উপকার পাবো সেই সম্পর্কে একটু জেনে নিই।

বাদাম ঃ ওজন বাড়ানোর জন্য বাদাম খুব ভালো একটি নাস্তা। বিভিন্ন ধরনের বাদাম খেতে পারেন যেমন চিনা বাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, আখরোট ইত্যাদি আপনার সুবিধামতো যে কোন বাদাম খেতে পারেন। বাদামে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, অনেক ধরনের মিনারেল, ফাইবার ও ভিটামিন। এগুলো একটা প্রিবায়োটিক খাবার, যা পেটের মধ্যে থাকা উপকারী জীবাণুকে সুস্থ রাখে।

কিসমিস ঃ নাস্তার জন্য বাদামের পাশাপাশি কিসমিস খেতে পারেন। কিসমিসের রয়েছে অনেক ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল। তবে কিশমিশ খেলে অনেকের দাঁতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমন সমস্যা হলে শুধু কিসমিস না খেয়ে বাদাম বা টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

আরো পড়ুন ঃ চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার ১০টি কার্যকারী উপায়

বিভিন্ন ধরনের বীজ ঃ ওজন বাড়ানোর জন্য আরেকটা সহজ উপায় হল বিভিন্ন ধরনের বীজ খাওয়া। যেমন মিষ্টি কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, তিলের বীজ, তিসির বীজ ইত্যাদি। এক একটা বীজ একেক ধরনের পুষ্টি বহন করে। তাই বিকালের নাস্তা হিসেবে যেকোনো বীজ খেতে পারেন। এটি আপনার ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

ওজন বাড়াতে রাতের খাবারে কি খাবেন

দুপুরের জন্য যেসব খাবার উল্লেখ করা হয়েছে ওজন বৃদ্ধির জন্য সেসব খাবারগুলো রাতের খাবারের জন্য প্রযোজ্য। তবে রাতের খাবার গভীর রাতে হাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অনেকে এমন আছে অনেক রাত্রে খাবার খায়, সুস্থ শরীরের জন্য এটি খুবই অস্বাস্থ্যকর। ওজন বৃদ্ধি করতে চাইলে রাতের প্রথম ভাগে খাবার খেয়ে নিন। দুপুরে ব্যস্ততার কারণে যদি উল্লিখিত খাবারগুলি বাদ পড়ে যায় তাহলে রাত্রে সেই খাবারগুলি পরিমাণ মতো খেয়ে নিন।

রাত্রের খাবারটা ওজন বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ওজন বৃদ্ধি করতে চাইলে, চেষ্টা করবেন রাত্রে পরিমাণ মতো খাবার খাওয়ার।

ওজন বৃদ্ধির জন্য যেসব খাবার খাওয়া উচিত নয়

ওজন বৃদ্ধির জন্য আপনি যে অতিরিক্ত খাবার খাবেন বা যা ইচ্ছা তাই খেয়ে যাবেন তাহলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে বিষয়টা এমন নয়। ওজন বৃদ্ধির জন্য যেসব  খাবার খাওয়া উচিত নয় নিচে তার তালিকা প্রদত্ত হলো।

কাস্টারড পুডিং ঃ কাস্টারড পুডিয়ে সাধারণত প্রচুর পরিমাণে চিনি দেওয়া থাকে। অতিরিক্ত চিনি বা তেল চর্বিযুক্ত খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, সেটা ওজন বাড়ানোর সময় এড়িয়ে চলা উচিত। না হলে মোটা হওয়ার জায়গায় শরীরে চর্বি বৃদ্ধি পাবে।

অতিরিক্ত তেল চর্বিযুক্ত খাবার ঃ ওজন বাড়ানোর জন্য কখনোই অতিরিক্ত তেল চর্বিযুক্ত খাবার খাবেন না। এটা আপনার স্বাস্থ্য মোটা হবে কিন্তু পুষ্টির ঘাটতি রয়ে যাবে। আর চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে চর্বি বেড়ে যাবে, যার ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।

ফাস্টফুড খাবার ঃ বাইরের ফাস্টফুড খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এইসব খাবারে গ্যাস্টিকের প্রবলেম হবে এবং পেটের নানা রকম সমস্যা হতে পারে। ফাস্টফুড খাবারে হয়তো আপনার ওজন বাড়াতে পারে কিন্তু পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারে না।

সাগু ঃ সাগর প্রায়ই পুরোটাই শর্করা। অর্থাৎ শুধুমাত্র এক ধরনের পুষ্টি উপাদান বেশি পরিমাণে থাকে। ১০০ গ্রাম সাগু দানায় রয়েছে মাত্র 1 গ্রামের চেয়েও কম প্রোটিন আর ফ্যাট। আর ভিটামিন ও মিনারেলের পরিমাণ নাই বললেই চলে। তাই ধরা যায় এটি পুষ্টিকর খাবার নয়। সাবুদানা নিয়মিত খেলে ওজন বাড়ে কিন্তু এটি স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এটা শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারে না।

ওজন বাড়াতে কি পরিমান খাবার খাবেন

সর্বপ্রথম, আপনি প্রতিদিন নিয়মিত যেসব খাবার খান, তার পাশাপাশি উপরে উল্লেখ করা খাবারগুলো যোগ করবেন। নিয়মিত যেসব খাবার খান সেগুলো বাদ দিয়ে শুধু এই খাবার খেলে ওজন বৃদ্ধি পাবে বিষয়টা কিন্তু এমন নয়।

মোটা-হবার-সহজ-উপায়-১৫-টি-কার্যকারী-টিপস

দ্বিতীয়ত, এখানে অনেকগুলো খাবারের কথা বলা হয়েছে এর মধ্যে সবার সবকিছু পছন্দ নাও হতে পারে। আবার বাড়িতে বাঁ হাতের কাছে সব সময় এই খাবারগুলি নাও থাকতে পারে। তবে অবশ্যই চেষ্টা করবেন ওজন বৃদ্ধির জন্য এই খাবার খাওয়ার। আশা করি ভালো উপকার পাবেন।

ওজন বৃদ্ধির ব্যায়াম

ওজন বাড়াতে খুব ভালো ব্যায়াম হচ্ছে স্ট্রেংথ ট্রেনিং। এ ধরনের ব্যায়াম শরীরের মাংসপেশি বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে। তবে এ ধরনের ব্যায়াম করার জন্য আপনাকে জিমে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। বাসায় থেকে কোন যন্ত্র বা ব্যায়ামের উপকরণের সাহায্য ছাড়াই এ ধরনের ব্যায়াম করতে পারবেন। কি ধরনের ব্যায়াম করতে পারবেন তার সংক্ষিপ্ত একটি বর্ণনা নিচে উল্লেখ করা হলো।

স্কোয়াটস ব্যায়াম ঃ কোমর থেকে দেহের নিজ অংশ, পায়ের হেমিস্ত্রির পেশী মজবুত করতে এই ব্যায়াম করতে পারেন। আপনি যদি সহজে ওজন বৃদ্ধি করতে চান তাহলে এই ব্যায়ামটি নিয়মিত করতে পারেন। এটা আপনার ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে।

ডেডলিফট ব্যায়াম ঃ সাধারণ কিছু ব্যায়ামের সঙ্গে শরীর অভ্যস্ত হয়ে গেলে ওজন বাড়ানোর জন্য ভার উত্তোলন করা যেতে পারে। কাঁধ, কোমর, পেট, পা সহ দেহের সমস্ত পেশীগুলোকে মজবুত করতে এই ব্যায়াম খুবই কার্যকরী। তবে প্রথম দিকে খুব বেশি ওজন তোলা উচিত নয়। অভ্যাস তো হয়ে গেলে.৪-৫ বার করা যেতে পারে।

বেঞ্চ প্রেস ব্যায়াম ঃ কাঁধ, বুক এবং ট্রাইসেফের গঠন পাশাপাশি পেশী মজবুত করার জন্য এই ব্যায়াম ভীষণ কার্যকারী। তবে এক্ষেত্রে দুই হাতে খুব সামান্য ওজন নিয়ে এই ব্যায়াম করা উচিত।

পুস আপ ব্যায়াম ঃ ওজন বৃদ্ধি করতে পুস আপ ব্যায়ামটি ভীষণ উপকারী স্বাস্থ্যের জন্য। অন্যান্য ব্যায়ামের পাশাপাশি এই ব্যায়ামটি করতে পারেন।

ওভারহেড প্রেস ব্যায়াম ঃ অন্যান্য ব্যায়ামের পাশাপাশি ওভারহেড প্রেস ব্যায়াম করে দেখতে পারেন। ওজন বৃদ্ধিতে এটিও খুব কার্যকরী একটি ব্যায়াম।

ওজন বাড়াতে কতক্ষণ ব্যায়াম করবেন

স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ওজন বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পাশাপাশি অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস তৈরি করুন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য সুস্থ থাকা অবশ্যই জরুরী। আর এজন্য অবশ্যই আপনার জন্য সপ্তাহে তিনদিন ব্যায়াম করা প্রয়োজন। কমপক্ষে ৪০-৫০ মিনিট পর্যন্ত।

আপনার যদি ব্যায়াম করার অভ্যাস না থাকে তাহলে প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হবে। তবে কয়েকদিন ব্যায়াম করলে ঠিক হয়ে যাবে। ব্যায়াম করার অভ্যাস একদম না থাকলে অল্প অল্প করে শুরু করুন। শারীরিক সুস্থতার জন্য ব্যায়াম করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ওজন বাড়ানোর পূর্বে কিছু সতর্কতা

আপনি কি ওজন বাড়াতে চান ? তাহলে ওজন বাড়ানোর পূর্বে বিশেষ কিছু সতর্কতা রয়েছে সেগুলো অবশ্যই মেনে চলুন। নিম্নে ওজন বাড়ানোর পূর্বে বিশেষ কিছু সতর্কতা সম্পর্কে আলোচনা প্রদত্ত হলো।

1. সর্বপ্রথম আপনার ওজন বৃদ্ধি করার প্রয়োজন আছে কিনা সেটা বুঝুন। যাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম তাদের ওজন বাড়িয়ে স্বাভাবিক আনা প্রয়োজন। কেননা স্বাভাবিকের চেয়ে ওজন কম হলে সমস্যা হতে পারে। যেমন - রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকা, অপুষ্টিতে ভোগা, কাজ না করেও ক্লান্ত লাগা, মেয়েদের মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

2. ওজন কম হওয়ার বিশেষ কিছু রোগ রয়েছে, যেমন; থাইরয়েডের সমস্যা, ডায়াবেটিকস, মানসিক রোগ ইত্যাদি। এসব রোগের কারনেও ওজন কমে যেতে পারে। তাই এক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করুন।

3. ওজন বাড়ানোর জন্য নিজে নিজে কোন ওষুধ বা কোন গ্রাম্য ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করবেন না। এসব ওষুধ আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁতিকর হতে পারে। গ্রামের দিকে এমন ডাক্তার পাবেন যারা মোটা হবার জন্য গরুর ওষুধ দিয়ে থাকে। এগুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।

4. খাবারের পরিমাণ আর ধরনের পরিবর্তন আনলে অনেক সময় গ্যাস্টিকের সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য খাবারের অভ্যাসগুলো ধীরে ধীরে পরিবর্তন করা উচিত। ফাইবার যুক্ত খাবার যেমন, ফলমূল, শাকসবজি, বাদাম ইত্যাদি এসব খাওয়ার পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি পানি এবং পানি জাতীয় খাবার খাওয়ার পরিমাণও বাড়াতে হবে।

5. যদি মনে করেন কোন সমস্যার কারণে ঠিকমতো খেতে পারছেন না, বা এর আগে যেই পরিমাণ খাবার গ্রহণ করতেন এখন সেই পরিমাণ খাবার খেতে পারছেন না। তাহলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এটা গুরুতর কোন রোগের লক্ষণ কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবেন। এ ধরনের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে- 

  • খাবারে অরুচি হওয়া
  • খাওয়ার পরে পেটে ব্যথা অনুভব করা
  • পেট ফাঁপা
  • যে কোন খাবারে বুক জ্বালাপোড়া করা
  • খাবার গলায় আটকে থাকে এমন মনে হয়
  • অল্প খাবার খেলে পেট ভরে গেছে এমন হওয়া
  • খুব ক্লান্ত ক্লান্ত লাগা
  • কিছুদিন পর পর অসুস্থ হয়ে পড়া
  • মুখের ঘা হওয়া
  • খাবার খেতে কষ্ট হওয়া

6. যদি মনে হয় কোন কারন ছাড়াই বা কোন চেষ্টা ছাড়াই ওজন কমে যাচ্ছে, তাহলে হেলাফেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। এটি ক্যান্সারের একটি অন্যতম লক্ষণ, তাই এ ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। কোন কারণ ছাড়াই যদি অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি হয়ে যায় সেটাও ভালো দিক নয়, আবার কোন কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়াটা ভালো লক্ষণ নয়।

FAQ:

এক মাসে এক কেজি ওজন বাড়ানোর উপায় ?

আপনি যদি এক মাসে এক কেজি ওজন বাড়াতে চান তাহলে আপনাকে যে খাবার খান তার চেয়ে ক্যালোরিযুক্ত খাবার বেশি গ্রহণ করতে হবে।

ওজন কমে যাওয়ার কারন কি ?

হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়ার কারণ হলো ডায়াবেটিস, হরমোন জনিত সমস্যা, থাইরয়েড ইত্যাদি। এসব রোগের জন্য হঠাৎ করে ওজন কমে যেতে পারে। অতিরিক্ত ওজন কমে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ওজন ও পেশি বৃদ্ধির উপায় ?

ওজন ও পেশি বৃদ্ধির জন্য কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ, চর্বিযুক্ত প্রোটিন, এবং চর্বিযুক্ত পরিমিত সুষম খাবার খেতে হবে।

কি খেলে মোটা হওয়া যায় ?

ওজন বাড়াতে চাইলে খাবার তালিকায় উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার রাখুন। নিয়মিত খাদ্য তালিকায় কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, চিনা বাদাম, কিসমিস, খেজুর, আলু বোখরা, পনির, মিষ্টি আলু, মুরগির মাংস, দুধ, কলা, এভোকাডো ইত্যাদি খাবার রাখতে পারেন।

খাবার খাওয়ার পর ঘুমালে কি ওজন বাড়ে ?

খাবার খাওয়ার পর পরই যদি ঘুমিয়ে যান তাহলে শরীরে ক্যালরি পড়ানোর জন্য যথেষ্ট সময় থাকে যার ফলে চর্বি জমা হতে পারে এবং ওজন বৃদ্ধি করে।

রাতে কি খেলে ওজন বাড়ে ?

দুপুরে যেসব খাবার খান, ঠিক সেই খাবার গুলি রাতে খেলে আপনার ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে।

আরো পড়ুন ঃ ফর্সা হবার সবচেয়ে ভালো সাবান

শেষ কথা ঃ মোটা হবার সহজ উপায়-১৫ টি কার্যকারী টিপস

মোটা হবার সবচেয়ে সহজ উপায় সম্পর্কে যারা জানতে চেয়েছিলেন, আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে অবশ্যই জানতে পেরেছেন। মোটা হবার জন্য পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া জরুরী। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি করাও ঠিক নয়, তাই আপনার বয়স অনুযায়ী ওজন যদি একদম কম থাকে তাহলে উপরে উল্লেখিত পদক্ষেপ গুলি অনুসরণ করুন, আশা করি এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করলে আপনার ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে ইনশা আল্লাহ।

প্রিয় পাঠক, মোটা হবার সহজ উপায় সম্পর্কে আপনার যদি আর কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই আমাকে কমেন্ট করে জানাবেন, আমি যথা সম্ভব চেষ্টা করবো সঠিক তথ্য প্রদান করার। এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মুন্নি ফিল্যান্সারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url